সুন্নাত কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
সুন্নাত কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? হাদিসের কথা এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত
যে পন্থা ও রীতি নাবী কারীম (সাঃ) অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নাত।
কুরআন মাজিদে মহত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ (أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে।
ইসলামি পরিভাষায় সুন্নাত হলো রাসুল [সাঃ] এর পন্থা ও আদর্শ। চাই তা আকিদাগত বা আমল।
এছাড়া সাহাবা কেরাম [রাঃ] এর আকিদা ও আমল সুন্নাহ এর অন্তর্গত।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ৩ প্রকার
১- কাওলি সুন্নাত- এটা হোল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম এর বানী -
প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল [বুখারি]
২-ফেলি সুন্নাত- এটা নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের কর্ম।
যেমন সালাত আদায়ের পদ্ধতি , হাজ্জ করার পদ্ধতি
৩- তাকরিরী সুন্নাত--এটা নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থন।
যেমন একজন লোককে ফজরের ফরজ নামায পড়ে তারপর সুন্নাত আদায়
করতে দেখার পর তার সমর্থন করলেন [ সহিহ আবু দাউদ]
সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাঃ ইবাদত হিসেবে
পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো
ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে সমর্থন করেননি।
এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়।
{আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮}
{আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০}
সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে,
তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে।তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে,
আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে।
ফরজ নামাযের আগে, পরের সুন্নতে মুআক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।
এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না করে এটাকে ছেড়ে দেয়,
তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। {আল হাদিস}
ঘুম থেকে জেগে উঠার দোয়া সুন্নত তরিকা
ঘুম থেকে জেগে উঠার দোয়া
দিন ও রাত্রির সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের এক বড় নিদর্শন এবং সকল মাখলুকের জন্য মহা নিয়ামত।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়াতে অগণিত অসংখ্য মাখলুক সৃষ্টি করে প্রত্যেককে তার পরিধিতে
সংসার জীবন প্রতিপালনে ব্যস্ত করে রেখেছেন এবং এ সকল কাজে সকল মাখলুকের মাঝে ক্লান্তি আসে,
আবার তা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন ঘুমের মাধ্যমে।
১। নিজ হাত দ্বারা চেহারা দেখে ঘুমের ভাব দূর করা।
২। ঘুম থেকে জেগে উঠার দোয়া পাঠ করা-
আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আহইয়ানা বা'দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর,
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যু নামক (ঘুমের)
পর জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই প্রত্যাবর্তন।
৩। মিসওয়াক করা।
৪। দুই হাত তিনবার ধৈাত করা।
৫। নাকে তিনবার পানি দেওয়া।
টয়লেটে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া কিভাবে পড়বেন
২। টয়লেটে প্রবেশ এবং বের হবার সময় দো’আ পাঠ করা-
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَاءِثِ
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি খুবুথ এবং খাবায়েথ (পুরুষ এবং নারী শয়তান) থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।
৩। বের হবার সময় দো’আ পাঠ করা-
غُفْرَ انَك
অর্থঃ ‘আমি আপনার (আল্লাহর) কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
আল বুখারী হা/১৪২, মুসলিম হা/৩৭৫।
আবু দাউদ হা/৩০ ।
অজু করার দোয়া কিভাবে অজু করবেন সুন্নত তরিকা
২। ওযুর শুরুতে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৩। কুলি করা এবং নাকে পানি টেনে নেয়া।
৪। বাম হাত দিয়ে নাক থেকে পানি বের করা।
৫। মুখে এবং নাকে পানি পৌছানো, গড়গড়া করার মাধ্যমে মুখের সব অংশে পানি পৌছানো
এবং নাকের উপরিভাগের অধিকাংশ অংশে পানি পৌছানো।
৬। হাতের একবারের পানি দিয়ে কুলি ও নাকে পানি প্রবেশ করানো।
৭। মিসওয়াক করা।
৮। ঘন দাড়ির মধ্যে আঙ্গুল চালানো মুখ ধৌত করার সময়।
৯। মাথা মাসেহ করা।
১০। আঙ্গুল এবং পায়ের পাতায় পানি পৌছানো।
১১। ডান হাত এবং ডান পায়ের দিক থেকে শুরু করা।
১২। চেহারা, বাহু এবং পা ধৌত করা এক বার থেকে তিন বার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।
১৩। ওযু শেষে শাহাদাহ পাঠ করা-
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَـهَ إِلاّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَريـكَ لَـهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمّـداً عَبْـدُهُ وَرَسـولُـه
অর্থঃ ‘আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত ইবাদত যোগ্য কোন ইলাহ নেই
এবং মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসূল।
এটা পাঠ করার ফাযীলাত হচ্ছে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা হবে
এবং সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।
১৪। বাড়িতে ওযু করা ।
১৫। ওযু করার সময় হাত দিয়ে দেহের পানি পৌঁছানোর অঙ্গগুলো ঘষা বা মর্দন করা।
১৬। হিসাব করে পানি ব্যবহার করা, যেমনঃ এক মুদ বা এক বদনা।
১৭। হাত এবং পায়ের ফারদ অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় এর সীমা বাড়ানো।
১৬। হিসাব করে পানি ব্যবহার করা, যেমনঃ এক মুদ বা এক বদনা।
১৭। হাত এবং পায়ের ফারদ অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় এর সীমা বাড়ানো।
১৮। ওযু শেষে দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করা
আল্লাহর রাসূল বলেছেন যে ব্যক্তি আমি যেভাবে ওযু করি এর মত করে ওযু করে
অতঃপর দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করে এবং এ সময় কোন কিছু চিন্তা না করে সলাতের সাথে জড়িত বিষয় ব্যতীত)
তার অতীতের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
অন্য হাদীসে রয়েছেঃ
তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি উপরোক্ত নিয়মে উত্তমভাবে ওযু সম্পাদন করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে যাদের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওযু সম্পাদন করে, গুনাহ্ তার শরীর থেকে ঝরে পরে এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নীচ থেকেও।
সে ঐ ব্যক্তির মধ্যেও অন্তর্ভূক্ত হবে যে ওযুর পরে দুই রাকাহ সলাত আদায় করে, যার ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
তোমাদের মধ্যে যে কেউ উত্তমভাবে ওযু করে এবং দুই রাকাআত সলাত আদায় করে তার চেহারা এবং হৃদয় দিয়ে (খুশু সহকারে)
তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
আবু দাউদ হাদিস /১০১, তিরমিজি হাদিস /২৫
আল বুখারী হাদিস /১৬৪, মুসলিম হাদিস /২২৬
আবু দাউদ হাদিস /২৩৬৬, তিরমিজি হাদিস /৭৮৮
আল বুখারী হাদিস /১৯১, মুসলিম হাদিস /২৩৫
মুসনাদে আহমাদ হাদিস /৯৯২৮
১।প্রত্যেক সলাতে, যেমন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কঠিন হতে
পারে মনে না করতাম তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রত্যেক সলাতের জন্য মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
পারে মনে না করতাম তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রত্যেক সলাতের জন্য মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
২। ঘরে প্রবেশ করে।
৩। ঘুম থেকে জেগে উঠে।
৪। কুরআন তিলাওয়াত করার সময়।
৫। যখনই মুখের গন্ধ পরিবর্তন হয়।
৪। ওযু করার সময়।
৩। ঘুম থেকে জেগে উঠে।
৪। কুরআন তিলাওয়াত করার সময়।
৫। যখনই মুখের গন্ধ পরিবর্তন হয়।
৪। ওযু করার সময়।
আল বুখারী হা /৮৮৭,
মুসলিম হাদিস /২৫২ ।
মুসলিম হাদিস /২৫৩।
আল বুখারী হাদিস /২৪৫
মুসলিম হাদিস /২৫৫।
১ । জুতো পড়ার সময় ডান পা থেকে শুরু করা এবং খোলার সময় বাম পায়ের দিক থেকে খোলা।
একজন মুসলিম বহুবার দিনে জুতো পরিধান এবং খুলে থাকে,
যখন সে নিয়্যাত এবং মানসিকতাসহ সুন্নাহ অনুযায়ী এই কাজটি করবে
সে অনেক পুরষ্কার অর্জনে সক্ষম হবে। মুসলিম, হা/২০৯৬।
যখন সে নিয়্যাত এবং মানসিকতাসহ সুন্নাহ অনুযায়ী এই কাজটি করবে
সে অনেক পুরষ্কার অর্জনে সক্ষম হবে। মুসলিম, হা/২০৯৬।
১। কাপড় পড়া এবং খুলে রাখার সময় বিসমিল্লাহ পড়া। (সাধারণ দলীলের ভিত্তিতে)
২। পোশাক পরিধানের দো’আ পাঠ করাঃ
২। পোশাক পরিধানের দো’আ পাঠ করাঃ
الْحَمْد لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْر حَوْل مِنِّي وَلَا قُوَّة
অর্থঃ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন এবং
আমাকে এটি দিয়েছেন আমার কোন সামর্থ এবং শক্তি ব্যতীত।
৩। কাপড় পরিধানের সময় ডান দিক থেকে শুরু করা।
৪। বাম দিক থেকে খোলা। (সাধারণ দালীলের ভিত্তিতে
আবু দাউদ হাদিস/৪০২৩।
আবু দাউদ হাহাদিস/৪১৪১।
ঘরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সুন্নত তরিকা
১। ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহকে স্মরণ করা যখন একজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে
এবং প্রবেশ করার সময় আল্লাহর নাম নেয় এবং খাবার সময়,
শয়তান বলে (অন্য শয়তানকে)
তোমাদের জন্য কোন বাসস্থান ও নেই এবং কোন খাবারও নয়।
তোমাদের জন্য কোন বাসস্থান ও নেই এবং কোন খাবারও নয়।
২। ঘরে প্রবেশের দো’আ পাঠ করাঃ
اَللهُمَّ اِنّيْ اَسْاَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَ خَيْرَ المَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَ بِسْمِ اللهِ لَجْنَا وخَرَجْنا وَعَلى ربِّنَا تَوَكَّلْنَا
অর্থঃ‘ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সর্বোত্তম প্রবেশ এবং সর্বোত্তম বের হওয়া কামনা করি।
আল্লাহর নামেই আমরা প্রবেশ করি এবং আল্লাহর নামেই আমরা বের হই
এবং আমাদের রবের প্রতি আমরা তাওয়াক্কাল করি,
অতঃপর ঘরের অধিবাসীদেরকে সালাম দেয়া।
৩। মিসওয়াক করা।
অতঃপর ঘরের অধিবাসীদেরকে সালাম দেয়া।
৩। মিসওয়াক করা।
৪। সালাম দেয়া,
৫। নিন্মের দো’আ পাঠ করে ঘর থেকে বে হওয়া,
بِـسْـمِ الـلـهِ تَـوَكَّـلْـتُ عَـلَـى الـلـهِ لاَ حَـوْلَ وَلاَ قُــوَّةَ اِلاَّ بِـالـلـهِ
অর্থঃ আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহরই উপর তাওয়াক্কাল করছি
এবং আল্লাহ ব্যতীত কোন সামর্থ এবং শক্তি নেই।
যে এটা বলে তাকে বলা হয়
তোমার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তুমি নিরাপত্তা পাবে এবং শয়তান পশ্চাদপসরণ করেছে।
যে এটা বলে তাকে বলা হয়
তোমার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তুমি নিরাপত্তা পাবে এবং শয়তান পশ্চাদপসরণ করেছে।
মুসলিম, হাদিস /২০১৮
আবু দাউদ, হাদিস /৫০৯৬
মুসলিম, হাদিস /২৫৩। আবু দাউদ, হাদিস /৫০৯৬
এবং আত তিরমিজি, হাদিস / ৩৪২৬
0 মন্তব্যসমূহ